নবাব সিরাজদৌলা।

                        (নবাব সিরাজদৌলা)
নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে যখন গ্রেফতার করে টেনে হিচঁড়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন অসংখ্য মানুষ হা করে নিরব দর্শকের মতো সেই দৃশ্য উপভোগ করেছিলো। শুধু তাই নয়, পিঠে ছুরিকাঘাত করার পূর্বে নবাবকে কাটাওয়ালা সিংহাসন ও ছেড়া জুতা দিয়ে যখন অপমান করা হচ্ছিলো, তখন শত শত মানুষ সেই কৌতুকে ব্যাপক বিনোদিত হয়েছিলো! মাস সাইকোলজিটা একটু খেয়াল করে দেখুন, এই জাতি দুইশো বছরের গোলামী সাদরে গ্রহণ করেছিলো ওভাবেই।
.
একটি তথ্য দিই। লর্ড ক্লাইভ তার ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লিখেছিল নবাব কে যখন ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল অপমান করতে করতে তখন দাঁড়িয়ে থেকে যারা এসব প্রত্যক্ষ করেছিল তারা যদি একটি করেও ঢিল ছুড়ত তবে ক্লাইভ কে করুন পরাজয় বরন করতে হতো। আরো চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার অশ্বারোহী, ৩০ হাজার পদাতিক এবং অসংখ্য কামান-গোলাবারুদসহ বিশাল সুসজ্জিত সৈন্যবাহিনী নিয়েই পলাশীর ময়দানে এসেছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। কিন্তু তার বিপরীতে রবার্ট ক্লাইভের সৈন্যসংখ্যা ছিলো মাত্র ৩ হাজার, যার মধ্যে ৯শ জনই ছিলো হাতে পায়ে ধরে নিয়ে আসা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর শৌখিন অফিসিয়াল সদস্য যাদের অধিকাংশেরই তলোয়ার ধরার মতো সুপ্রশিক্ষণ ছিলো না, কোন দিন যুদ্ধ করেনি।
.
এতো কিছু জেনেও রবার্ট ক্লাইভ যুদ্ধে নেমেছিলো এবং জিতবে জেনেই নেমেছিলো। কারণ, রবার্ট ক্লাইভ খুব ভালো করেই জানতেন একটি হীনমন্য ব্যক্তিস্বার্থলোভী দ্বিধাগ্রস্ত জাতিকে পরাস্ত করতে খুব বেশি আয়োজনের প্রয়োজন নেই ; রক্ত-যুদ্ধ এইসব এদের জন্য মশা মারতে কামান দাগার মতো অবস্থা। যাদেরকে সামান্য দাবার চালেই মাত করে দেয়া যায়, তাদের জন্য হাজার হাজার সৈন্যের জীবনের ঝুকি তিনি কেনো নিবেন ? এছাড়াও, মীরজাফরকে যখন নবাবীর টোপ গেলানো হয়, রবার্ট ক্লাইভ তখনো জানতো যে, সিরাজকে পরাজিত করার পর এই বদমাশটিসহ বাকিগুলোর পাছায়ও লাথি দেয়া হবে এবং হয়েছেও তাই। মীরজাফর, উমিচাঁদ, রায়বল্লভ, ঘষেটি বেগম সহ সবগুলোরই করুণ মৃত্যু হয়েছিলো।
.
রবার্ট ক্লাইভ মীরজাফরের বেইমানীর উপর ভরসা করে যুদ্ধে আসেনি। সে যুদ্ধে এসেছিলো বাঙালীর মানসিকতা ও ভূত-ভবিষ্যতসহ বহুদূর পর্যন্ত নিখুঁতভাবে আন্দাজ করে। সে জানতো, মীরজাফরকে টোপ দিলে গিলবে এবং কাজ শেষ হলে লাথি দেবে। সে জানতো, যুদ্ধশেষে জনসম্মুখে নবাবের পাছায় লাথি দিলেও এই জাতি বিনোদনে দাঁত কেলাবে, অথবা হা করে সব চেয়ে চেয়ে দেখবে। বিনা দ্বিধায়ই সার্টিফিকেট দেয়া যায়, বাঙালী জাতির কদাকার মানসিকতা সবচেয়ে নিখুঁতভাবে মাপতে পারা ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তিটির নাম রবার্ট ক্লাইভ ... !
আসলে আমাদের রক্ত দূষিত, আমরা পুরো জাতি এই গুটিকয়েক খারাপ মানুুষের কাছে বন্দী।
এখনও সেই ধারা অব্যাহত। তাই রাজনীতির নামে বাংলার কোনে কোনে আজ আগুন জ্বলছে, রক্ত ঝরছে। সেইসব মহাপুরুষ যাদের আত্মত্যাগ আর সংগ্রাম বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের গর্বিত করেছে আমরা তাদের মূর্ত ভাঙছি বা কালিমালিপ্ত করছি। সে কালি যে আমাদের মুখেই এসে পড়ছে সেই বোধটুকুও আমাদের হারিয়ে গেছে। যে সৌভাতৃত্ববোধ আমাদের গর্বের বিষয় ছিল তাকে বিসর্জন দিয়ে আমরা ভাতৃহত্যায় লিপ্ত আজ । আর এগুলি সবই হচ্ছে গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী মানুষের প্ররোচনায়। এখনও আমাদের মধ্যে কিছু মীরজাফর, কিছু রবার্ট ক্লাইভ রয়ে গেছে... যাদের কাজই হল প্রতিপদে বাংলার শান্তি ভঙ্গ করা, বাঙালীকে কালিমালিপ্ত করা। আর আমরা সিংহভাগ বাঙালি দরজায় খিল দিয়ে বসে আছি। তাই আবার হয়তো সময় এসেছে আমাদের গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার....
*শুধুমাত্র খারাপ বলছিনা,শুধু গল্পটা সোনানোই উদ্দেশ্য।
এই বাংলায় জন্মেছেন রবি ঠাকুর,স্বামীবিবেকানন্দ,সত্যেন বোস, সুভাষচন্দ্র এর মত মহান ব্যক্তিত্ব।
---------------(সংগৃহিত)

No comments

এক চিলতে রোদ্দুর।

খুব সাবধানে পায়ের আওয়াজ বাঁচিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো সুচেতনা। পবিত্র ওপাশ ফিরে এখনও ঘুমাচ্ছে। বাথরুমের লাইট জ্বেলেই দুফোঁটা ইউরিন ফেললো প্...

Powered by Blogger.