পিশাচ_সংসার(5)

পিশাচ-সংসার
----------------------------
★লেখক-মাসুদ রানা ।
----------------------------
          (পর্ব-5)
     ---------------

গাড়ি থেকে জীবন আহমেদ এবং আলী আমজাদ কিছুটা দুরে একটা মহিলা কন্ঠের কান্না শুনে গাড়িটা থামিয়ে দেয়। অন্যদিকে জাহানারাও একটা গাড়ি আসার শব্দ শুনে কান্না থামিয়ে দেয়।

হঠাৎ গাড়ির শব্দ শুনে জাহানারা অনেক ভয় পেয়ে যায়। তার সামনেই পড়েছিলো শামীমের ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত দেহ। সে ভাবলো তাহলে কি তাদের খুজতে সত্যি সত্যিই কেউ জঙ্গলে চলে এসেছে! জাহানারা একবার ভাবলো দৌড়ে পালিয়ে যাবে। পরে আবার চিন্তা করলো দৌড়ে পালিয়ে লাভ কি! এখনতো আর তার সাথে শামীম নেই। আর জঙ্গলের ভেতরে রক্ত না পেয়ে তৃষ্ণায় একাই সে মারা যাবে। তাই জাহানারা চুপচাপ শামীমের লাশের সামনে বসে ছিলো।

অন্যদিকে হাতে বন্দুক নিয়ে জীবন আর আলী আমজাদ দুজনে ভয়ে ভয়ে যেদিক থেকে জাহানারার কান্নার শব্দ পেয়েছিলো সেদিকে হাটতে থাকে। তারা জানে যে জঙ্গলের এতোটা ভেতরে কোন স্বাভাবিক মানুষ থাকতে পারে না। তারা ভাবে হয়তো এই সেই মানুষ খেকো পিশাচ মহিলাটি।

তারা এরপর যখন জাহানারা এর সামনে গেলো জাহানারা চুপচাপ বসেছিলো। এইদিকে আলী আমজাদ আর জীবন জাহানারার সামনে পরে থাকা শামীমের ছিন্নভিন্ন লাশ দেখে ভয়ে আতকে উঠে। তাদের আর বুঝতে বাকি রইলোনা যে এই মহিলাটিই এই পুরুষটাকে হত্যা করেছে।
তবে পুরুষটাকে তারা চিনতে পারে নি। আলী আমজাদ বুঝতে পেরেছিলো যে হয়তো এই পুরুষ ও পিশাচ ছিলো। কিন্তু মহিলাটির রক্ত তৃষ্ণার শিকার হয়েছে এখন। হয়তো এই পুরুষটাই মহিলাটির সাথে মিলে বাচ্চাটাকে হত্যা করছিলো। এখন সবার আগে এই পিশাচ মহিলা আর এই লাশটাকে থানায় নিতে হবে বললো জীবন।

এরপর হাবিলদার গুলো শক্ত করে জাহানারাকে শিকল দিয়ে বেঁধে গাড়িতে তোলে। শামীমের লাশটাকেও তারা গাড়িতে তোলে। জাহানারাও তাদের কোন বাধা দেয় না। চুপচাপ গাড়িতে উঠে পরে। এরপর তারা থানার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দেয়।

গাড়িতে জীবন এবং আলী আমজাদ অনেক প্রশ্ন করেন জাহানারাকে। তবে জাহানারা কোন উত্তর দেয় না চুপচাপ বসে থাকে। জাহানারা এর চোখগুলো বেশ অদ্ভুত লাল। আর তার মুখে এবং শরীরে এখনো শামীমের তাজা রক্ত লেগে রয়েছে। যদিও জাহানারার পুরো শরীর ছিকল দিয়ে বাধা ছিলো তাও জীবন জাহানারার এই অদ্ভুত চেহারা দেখে বেশ ভয় পাচ্ছিলো। অপরদিকে ডাক্তার আলী আমজাদ বেশ কৌতুহলি হয়ে উঠেন। কারন এর আগে তিনি অনেক পিশাচের গল্প লিখেছেন পড়েছেন তবে এই প্রথম কোন পিশাচকে সরাসরি দেখলেন। তিনি ভাবলেন এই পিশাচকে নিয়ে আবার একটা গল্প লিখবেন। এবার তিনি সফল হবেন ই।

এগুলো ভাবতে ভাবতেই তারা থানায় পৌছে গেলো। তারা জাহানারাকে নিয়ে একটা অনেক ভেতরের ঘরে ঢুকলো। জাহানারার শিকলটা খুলে তাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে শক্ত করে দড়ি দিয়ে বেধে ফেলেন জীবন। এরপর জীবন একের পর এক প্রশ্ন করেই যায় জাহানারাকে। তবে জাহানারা একটা প্রশ্নেরো উত্তর দেয় না। সে চুপ করে শুধু রাগান্বীত দৃষ্টিতে জীবনের দিকে তাকিয়ে থাকে। জীবন কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। তাই সে আলী আমজাদকে বলেন:
-স্যার! এই মহিলাটা আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে রয়েছে যে মনে হচ্ছে একটু পর আমাকেই খেয়ে ফেলবে। আপনি কিছু জিজ্ঞাস করুন প্লিজ। এরপর আলী আমজাদ নম্রভাবে জাহানারাকে বলে:
-দেখো তোমার নাম আমি জানি না। তবে আমি জানি এতোসব হত্যা তুমি নিজের ইচ্ছায় করোনি। তোমার ভেতরে নিশ্চই কোন পৈশাচিক শক্তি প্রবেশ করেছে। তুমি জঙ্গলে যাকে হত্যা করেছো এবং এই মেলার পাশে যে বাচ্চা ছেলেটাকে হত্যা করা হয়েছিলো তাদের দুজনকে একই ভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারমানে ঐ বাচ্চাটাকেও তুমিই মেরেছো। তবে জঙ্গলে তুমি যাকে হত্যা করেছো যার লাশটা আমরা নিয়ে এসেছি এটা কার লাশ ছিলো? এই লাশটা কি তোমার স্বামীর ছিলো? যার সাথে তুমি একত্রিত হয়ে বাচ্চাটাকে হত্যা করেছিলে? শেষ পর্যন্ত নিজের স্বামীকেও হত্যা করলে? তুমি শেষ হয়ে গেছো । তুমি ধরা পরে গেছো মেয়ে।
তুমি আমাকে বলো যে তুমি কিভাবে এই পিশাচ হলে? তুমি কিভাবে অভিশপ্ত হলে? হয়তো আমি তোমাকে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারি।

এরপর জাহানারা শামীমের কথা মনে করে কাঁদতে কাঁদতে লাগলো। আর পাগলের মতো বলতে লাগলো :
-বিলাস বাংলো। পিশাচ সংসার। অভিশপ্ত বই।

কয়েকবার একই কথাই চিৎকার করে বলতে থাকে।
এরপরেই জাহানারা হঠাৎ ই অজ্ঞান হয়ে পরে যায়। জীবন তাকে অজ্ঞান থেকে উঠাতে চাইলে ডাক্তার আলী আমজাদ জীবনকে নিষেধ করেন আর বলেন:
-থাক! এখন ওকে ডাক দিওনা। ঘুমাতে দাও। এখন হয়তো আর কিছু বলবে না। তবে কাল সকালে তার কাছ থেকে সব পিশাচ রহস্য এবং এতগুলো খুনের কারন জেনে নিবো। কাল সকাল পর্যন্ত মেয়েটাকে এই ঘরেই আটকে রাখো। তবে খেয়াল রেখো রাতে যাতে এখানে কেউ না আসে।
তাহলে আর সে ফিরে যেতে পারবে না।

এরপর জাহানারাকে ঘরে একা আটকে রেখে বাহির থেকে তালা দিয়ে জীবন এবং আলী আমজাদ চলে যায়।

আলী আমজাদ সারারাত ঘুমোতে পারেনি। সে শুধু ভাবছিলো জাহানারা এর বলা কথাগুলোর মানে কি! বিলাশ বাংলো! পিশাচ সংসার আর অভিশপ্ত বই। এগুলো ভাবতে ভাবতে শেষ রাতে একটু চোখদুটো ঘুমে লেগে এসেছিলো আলী আমজাদের।

তারপর হঠাৎ ভোরে পুলিশ জীবনের ফোন কলে ঘুম ভাঙে আলী আমজাদের। ঘুম থেকে উঠে জীবনের কল ধরতেই জীবন কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আলী আমজাদকে বললো:
-স্যার? আপনি তাড়াতাড়ি থানায় চলে আসুন। এখানে অনেক খারাপ কিছু হয়েছে।
-কি হয়েছে জীবন?
-স্যার আপনি দ্রুত এখানে চলে আসুন। আসলেই দেখতে পারবেন।

এই বলেই জীবন কলটা কেটে দিলো। আলী আমজাদ চিন্তায় পরে গেলো। তাহলে কি থানায় মেয়েটা আবার কাউকে হত্যা করে রক্ত তৃষ্ণা মিটিয়েছে। কিন্তু তাকেতো ঘরে তালা দিয়ে এসেছিলো তারা। আর বেশি কিছু চিন্তা না করেই দ্রুত চলে গেলেন থানায়।

আলী আমজাদ থানায় গিয়ে যাহ দেখলেন তার জন্য তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

জাহানারা মারা গেছে। তার পুরো শরীরে নোখের দাগ। চামড়া ছেরা। মনে হচ্ছিলো কেউ তার শরীর ছিড়ে চুসে রক্ত খেয়ে তাকে হত্যা করেছে। এরপর আলী আমজাদ সব ঘটনা বুঝতে পারলো। জাহানারাকে আর কেউ হত্যা করেনি। সে নিজেই নিজেকে নোখ দিয়ে ছিরে হত্যা করেছে।

আসলে গতরাতে জাহানারা এর যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে ঘরে একাই ছিলো। হঠাৎ তার প্রচুর রক্ত তৃষ্ণা জেগে উঠে আর সে আশেপাশে কাউকেই খুজে পায় না রক্ত তৃষ্ণা মেটানোর জন্য। অবশেষে রক্ত না পেয়ে পাগলের মতো হয়ে যায় জাহানারা। এবং রক্ত তৃষ্ণা মেটানোর জন্য নিজের শরীর ছিরে ছিরে নিজেই রক্ত খেতে থাকে এবং এক পর্যায়ে সে মারা যায়।

সকল পিশাচ রহস্যের কারন একমাত্র জাহানারারই জানা ছিলো। কিন্তু তার মৃত্যুর সাথে সাথে রহস্য জানার উপায়টাও শেষ হয়ে গেলো জীবন আর আলী আমজাদের।

তারা দুজনেই মন খারাপ করে বসেছিলো। হঠাত আলী আমজাদের একটা কথা মনে পড়লো: "বিলাস বাংলো। পিশাচ সংসার। অভিশপ্ত বই।" হয়তো এর ভেতরেই কোন সুত্র লুকিয়ে রয়েছে। আলী আমজাদ জীবনকে প্রশ্ন করে:

-আচ্ছা 'বিলাস বাংলো' কি হতে পারে? এটাকি কোন বাড়ির নাম?
-হ্যাঁ স্যার হতে পারে। আমি এইরকম একটা বাড়ির নাম শুনেছিলাম। এখান থেকে কয়েক গ্রাম পরেই মনে হয় রয়েছে।
-তাহলে চলো লোকের কাছে খোজ নিয়ে ঐ বাড়িতেই যাই। হয়তো সকল রহস্যের সমাধান ঐখানেই রয়েছে।


এরপর বাড়িটার সঠিক ঠিকানা বের করে গাড়িতে করে তারা সেই বিলাস বাংলোতে পৌছালো। বাড়িটা বেশ নির্জন একটা জায়গায়। বাড়িটা দেখতেই অনেকটা ভুতুরে। এরপর আলী আমজাদ জীবনকে বাড়িটার বাহিরের দিকটা ভালোমতো দেখতে বলে একাই বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়। প্রত্যেকটা ঘর ঘুরে ঘুরে দেখে আলী আমজাদ । তবে কিছুই খুজে পায়না সে। এরপর সে পৌছে সেই অভিশপ্ত লাইব্রেরীতে।

লাইব্রেরীর সেলফে ভৌতিক গল্পের বই দেখে আলী আমজাদের অনেক ভালো লাগে। কারণ সেতো ছোটবেলা থেকেই হরর গল্প পছন্দ করেন এরপর লাইব্রেরীর পুরোটা ভালোভাবে খুজতে থাকে সে যে এখানে আর কি কি রয়েছে। এরপর সে লাইব্রেরীর এককোনা থেকে একটা বড় সিন্দুক দেখতে পায়। সিন্দুকটা অবশ্য তালাবদ্ধই ছিলো। চাবি না পেয়ে শেষে তালাতে একটা পাথর দিয়ে বারি মেরে
খুলে ফেলে আলী আমজাদ। এরপর আলী আমজাদ বেশ কিছু ডায়েরী দেখতে পায়। ডায়েরীগুলো পড়েতো আলী আমজাদ পুরোই অবাক। প্রত্যেকটা ডায়েরীতে শুধু পিশাচের গল্প লেখা। আর গল্পগুলো এতোটাই ভালো ছিলো যে এতোটা ভালো পিশাচ গল্প এর আগে কখনো পড়েনি ডাক্তার আলী আমজাদ। সবগুলো ডায়েরীর শেষে তিনি একটা অন্য র্রকম পিশাচের গল্পের বই দেখতে পেলেন। বইটার নাম ছিলো "পিশাচ সংসার।" নামটা দেখে তার মনে পড়লো এই বইটার কথাইতো মেয়েটা বলেছিলো। অভিশপ্ত বই। বইটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো আলী আমজাদ। হঠাৎ একটা ঠান্ডা হাওয়া বয়ে আসতে লাগলো লাইব্রেরীতে।

এরপর হঠাৎ একটা মেয়েলি কন্ঠ আলী আমজাদকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে:
-কে আপনি? এখানে কি চান?

আলী আমজাদ মেয়েটাকে লক্ষ না করে বইটার দিকে তাকিয়েই বলে:
-দেখছো না বই দেখছি! কি অপরুপ সুন্দর লেখার এই বই। কত সুন্দর লেখনি ডায়েরী গুলোর লেখাতে। অপরুম পিশাচের গল্প গুলো। কিন্তু তুমি আগে বলো তুমি কে?
-আমি এই পিশাচ গল্পগুলোর লেখিকা। আকসারা ইসলাম মায়া।


. . . . Continue. . . . .
  (6 পর্বে গল্প শেষ)

1 comment:

এক চিলতে রোদ্দুর।

খুব সাবধানে পায়ের আওয়াজ বাঁচিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো সুচেতনা। পবিত্র ওপাশ ফিরে এখনও ঘুমাচ্ছে। বাথরুমের লাইট জ্বেলেই দুফোঁটা ইউরিন ফেললো প্...

Powered by Blogger.