পিশাচ_সংসার।(1)

পিশাচ_সংসার।
লেখক-মাসুদ রানা।
       (পর্ব-১)
----------------------




রোজকার মতো আজকেও শামীম আর তার স্ত্রী জাহানারা একটা লাশ নিয়ে তাদের বিলাস ভাঙলোতো প্রবেশ করলো। লাশটার পুরো শরীর কাপড় দিয়ে মোড়া ছিলো। নিজেদের ঘরে নিয়ে শামীম আর জাহানারা দুজনেই একটা আনন্দের চিৎকার দিলো।
এরপর জাহানারা ঘরের রান্না ঘর থেকে একটা ধারালো ছুরি নিয়ে আসলো। লাশটা একটা ২০-২২ বছর বয়সের পুরুষের। কিছুক্ষন আগেই তাকে শ্বাসরোধ করে মেরেছে শামীম আর জাহানারা। এই নিয়ে তারা ১১ টা মানুষকে হত্যা করেছে। জাহানারা ছুরিটা এনে আনন্দের সাথে লাশটার গলায় চালিয়ে দিলো। তারপর ঘরের চারিদিক রক্ত ছিটে ভরে গেলো। এরপর জাহানারা পাগলের মতো লাশটার শরীর চুষে রক্ত খেতে থাকে। আর একটু পরপর বলতে থাকে:
-আহ! শামীম রক্তে অনেক তৃপ্তি পেলাম। রক্তের মতো স্বাদ আর পৃথিবীতে অন্য কিছুর নেই।

লাশটার পুরো শরীর কয়েক মিনিটের মধ্যে রক্তশুন্য করে দিলো জাহানারা। এরপর শামীমকে চোখের ইশারায় বললো:

-বাকিটা তোমার খাবার। খাও তৃপ্তি করে। মিটাউ তোমার ক্ষুধা।

এরপর শামীম পাগলের মতো লাশটার উপর ঝাঁপিয়ে পরে। লাশটার শরীরের বিভিন্ন অংশ ছুরি দিয়ে কেটে কেটে আলাদা করে এরপর তা ছিরে ছিরে খেতে লাগলো। পুরো শরীর খাওয়া শেষে লাশটার হাড় গুলো কুকুরের মতো কামড়ে খেতে লাগলো। পুরো শরীর মুহূর্তেই গায়েব করে দিলো তারা দুজনে।

এরপর আনন্দের সাথেই শামীম আর জাহানারা তাদের বিছানায় শুয়ে পড়লো। জাহানারা বলতে লাগলো:

-আহ! শামীম। যুবকদের লাশের রক্তের স্বাদই আলাদা হয়। তাই না! রোজ যদি এইরকম একটা করে তাজা লাশ পেতাম। আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হতাম।
-তাদের মাংসের গন্ধ আর স্বাদও তুলনা করার মতো নয়।তবে আজ ৩ দিন পর কতো কষ্ট করে বোকা বানিয়ে একটা মানুষকে পেলাম। আশেপাশের এলাকার মানুষেরা আমাদের সম্পর্কে হয়তো কিছু ধারণা করতে পেরেছে।
-হুম শুনলাম অনেকেই ভয়ে এই এলাকায় আসা বন্ধ করে দিয়েছে। এই এলাকার আশেপাশে থেকেই যে ১১ টা মানুষ ঘুম হয়েছে সেটা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। তাই ভয়ে অনেকেই এইদিকে আশা বন্ধ করে দিয়েছে। পুলিশো নাকি এই বিষয়ের তদন্তে এইদিকে আসে। এইটা নিয়ে ভয় হয় আমার। পুলিশ যদি কিছু বুঝতে পেরে যায়!!
-ভয়ের কি আছে! পুলিশের শরীরেও তো রক্ত আর মাংস থাকে। তারা যদি আমাদের বাড়িতে আসে না হয় তারাই আমাদের একদিনের খাবার হবে।
-হাহাহা। দারুন বলেছো। আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ো। কাল আবার আরেকটা শরীরের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে হবে।

এই বলেই শামীম আর জাহানারা ঘুমিয়ে পড়ে।


শামীম আর জাহানারা এখন পিশাচ। তাদের রোজকার খাবার মানুষের তাজা রক্ত আর মাংস। তবে তারা কয়েক মাস আগেও সাধারণ মানুষ ছিলো। শামীম একজন সরকারী চাকুরীজীবী ছিলো আর জাহানারা একজন শিক্ষিকা।

তাদের জীবনটা স্বাভাবিক ভাবেই চলছিলো। তবে তাদের জীবনের কাল হয়ে দাড়ালো এই বিলাস ভাঙলোটাই। শামীম সরকারি চাকুরী করতো তাই প্রায়ই তাকে ট্রান্সফার হয়ে বিভিন্ন জেলাতে যেতে হতো। আজ থেকে ৬ মাস আগে তারা এই দপ্তরপাড়ায় এসে উঠে। এখানে এই বিলাস ভাঙলোটা তারা থাকার জন্য সরকারি ভাবে পায়।

তবে অনেকেই তাদের নিষেধ করেছিলো এই অভিশপ্ত বাড়িতে না উঠার জন্য। এই বাড়িটা নাকি একটা অপবিত্র অভিশপ্ত বাড়ি। তবে জাহানারা আর শামীম তারা দুজনেই শিক্ষিত। তাই তারা এই সকল অভিশাপে বিশ্বাস করতোনা। একজন তাদের বলেছিলো এর আগেও নাকি তিন চারটা দম্পতি এখানে এসেছিলো তবে এর বেশকিছুদিন পর থেকে আর তাদের খুজে পাওয়া যায়নি। এইসব কথা শুনেও বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামায়না তারা। এই বিলাস ভাঙলোতে তাদের জীবন স্বাভাবিক ভাবেই কাটছিলো। বেশ নির্জন শান্তশিষ্ট একটা জায়গা ছিল এটি। তারা একটা কাজের মেয়েকেও এখানে রেখে দিয়েছিল। একদিন জাহানারা পুরো বাড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে একটা নতুন ঘর আবিষ্কার করেন। এইটাকে ঘরও বলা যায় না। একটা লাইব্রেরি ছিলো। জাহানারা বেশ খুশি হয়। কারন সে বই পড়তে অনেক ভালোবাসে। সে সবগুলো বই দেখলো। বইগুলো সব হরর গল্পের ছিলো। জাহানারা হরর অনেক পছন্দ করতো। তবে সেই বইগুলোর মধ্যে একটা বই দেখতে বেশ অদ্ভুত ছিলো। বইটার নাম ছিলো "পিশাচ সংসার।" বইটার একটি বিশেষত্ব হলো বইটা পুরোটা হাতে লেখা। হাতের লেখাটা বেশ সুন্দর ছিলো। তবে হাতে লেখা হরর গল্পের বই দেখে বেশ কৌতুহল জাগে জাহানারা এর বইটা পড়ার। এখানে তখন তারা নতুন এসেছে। শামীমতো সারাদিন অফিসেই থাকতো। কিন্তু জাহানারা বাড়িতে একা থাকতে থাকতে বোরিং হয়ে যেতো। কাজের মেয়েটাও সবসময় সাথে থাকতো না তার। তাই ভাবলো এখন ভালোই হলো বইগুলো পড়ে ভালোই সময় কাটবে।
সেদিন কাজ শেষে জাহানারা সেই হাতের লেখার "পিশাচ সংসার" বইটা পড়া শুরু করে।

বইটার কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পরেই হঠাৎ জাহানারা এর মাথা প্রচুর ব্যাথা করতে থাকে। সে মাথা ব্যাথায় বই পড়া বন্ধ করে দেয়। এরপর যখন তার মাথা ব্যাথা ঠিক হয়ে যায় তখন জাহানারা ভুলে যায় সে বইটার কতটুকু পড়েছিলো আর কি পড়েছিলো। এরপরেরদিন আবার যখন জাহানারা বইটা পড়ে তার সাথে ঠিক একই ঘটনা ঘটতে থাকে। সে জানে যে সে কিছু পড়েছিলো বইটাতে। তবে কি পড়েছিলো তা কিছুতেই মাথায় আসতোনা তার। হঠাৎ তার মাথা ব্যাথার সাথে বইটার কি সম্পর্ক এইটাও বুঝতে পারেনা জাহানারা। অনেক দিন একই ঘটনা ঘটার পর জাহানারা এই কথাটা তার স্বামী শামীমকে বলে। শামীম প্রথমে ভাবে হয়তো জাহানারা মজা করছে। পড়ে কথাটা বাস্তবে নিয়ে শামীমও বইটা পড়ার চেষ্টা করে। শামীমের সাথেও ঠিক একই ঘটনা ঘটে। কিছুক্ষন বইটা পড়ার পর হঠাৎ মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায় তার। তারপর ভুলে যায় যে বইটাতে কি পড়েছিলো। তারা দুজনেই বেশ অবাক হয়ে যায়। বইটাতে কি এমন আছে ! শামীম আর জাহানারা দুজনেরই বইটার প্রতি একটা নেশা লেগে যায়। তারা বাড়ে বাড়ে বইটা পড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের এই অদ্ভুত কারনে মাথা ব্যাথাটাই অনেক ভালো লাগতে থাকে এবং তাদের ভেতর বেশ অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা
যায়।

তারা পালাক্রমে একজনের পর আরেকজন বইটা পড়া নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে যায়। এবং প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় চিৎকার করতে থাকে। তবে প্রতিবার পড়ার পর মাথা ব্যাথা হওয়ার পরেও তারা বইটা পড়ার নেশা পাল্টাতে পারেনা। বইটা পড়তে পড়তে তাদের মনুষ্যত্ব ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। শামীম তার অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নেয়। সাধারণ খাবার গুলোও তাদের ভালো লাগে না। হঠাৎ তারা আরো বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠে। তাদের অন্য রকম এক ক্ষুধা আর তৃষ্ণার অনূভূতি জাগে। জাহানারা এর তাজা রক্তের তৃষ্ণা লাগে আর শামীমের তাজা শরীরের তাজা মাংসের নেশা। তার প্রথম হত্যা করে তাদের বাড়িতে কাজ করতে আসা সেই ১৫ বছর বয়সের মেয়েটাকে।

সেদিন শামীম আর জাহানারা সেই বইটা পড়ছিলো এবং এক পর্যায়ে হঠাৎ তাদের রক্ত তৃষ্ণা লেগে যায়। ঠিক তখনই ঘর পরিষ্কারের জন্য ঘরে প্রবেশ করে কাজের মেয়েটা। মেয়েটাকে দেখে জাহানারার চোখে রক্ত নেশা লেগে উঠে। জাহানারা অদ্ভুতভাবে মেয়েটার সামনে গিয়ে দাড়ায়। মেয়েটা কিছুটা অবাক হয় আর অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। এরপর জাহানারা মেয়েটার গলা চেপে ধরে। মেয়েটা চিৎকার দিতে নিয়েও চিৎকার দিতে পারেনা। এরপর শামীম এসে মেয়েটাকে শক্ত করে ধরে তার মাথাটা একটা দেয়ালের সাথে ধাক্কা দেয় এবং কাজের মেয়েটার মাথা ফেটে চারিদিকে রক্ত ছিটিয়ে পড়ে।
জাহানারা পাগলের মতো মেয়েটার শরীরের সব রক্ত শুসে খেয়ে ফেলে আর শামীম মেয়েটার শরীর ছিরে ছিরে খেতে থাকে। এটাই ছিলো শামীম আর জাহানারা এর প্রথম খুন। তখন থেকে তাদের রক্ত নেশা আরো বাড়তে থাকে এবং এখন পর্যন্ত ১১টা খুন করেছে তারা।

অবশ্য তাদের এই পিশাচ হয়ে উঠার মূল কারনই হলো এই অভিশপ্ত বাড়ির অভিশপ্ত বইটা। এই বইটাতে এমন এক অভিশাপ রয়েছে যে , কোন দম্পতি এই বইটা পড়লে তারা পিশাচ হয়ে যাবে এবং একের পর এক হত্যা করে তাদের রক্ত এবং মাংস খাবে এবং তাদের সংসার হয়ে উঠবে পিশাচ সংসার। শামীম এবং জাহানারার আগেও আরো ৪টা দম্পতি এই অভিশপ্ত বইটার অভিশাপের স্বীকার হয়। এক পর্যায়ে যারা আর কোন মানুষ পায় না খুন করে রক্ত খাবার মতো, তাদের তৃষ্ণা মেটাতে তারা অবশেষে নিজেদের শরীর ছিরে ছিরে নিজেরাই খেতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তারা মারা যায়। হয়তো এক সময় আর লাশ না পেলে শামীম আর জাহানারাও মারা যাবে।

তবে এই অভিশপ্ত বাড়িটার কাহিনী শুরু আরো অনেক বছর আগে থেকে। এই অভিশপ্ত বইটার লেখিকা হলেন আকসারা ইসলাম মায়া। তিনি আজ থেকে ১০ বছর আগে বইটা লেখেন এবং এর পরেই বইটাকে অভিশপ্ত করেন। লেখিকা মায়া যখন বইটা লিখেন তখনও বইটা স্বাভাবিক একটা বই ছিলো। তবে জীবনের এক কঠিন অবস্থায় পরে বইটাকে অভিশপ্ত করেন মায়া।

মায়া একজন অনেক ভালো লেখিকা ছিলেন। তবে তার এই রকম অদ্ভুত অভিশপ্ত পৈশাচিক বই লেখারো একটা অদ্ভুত কারন রয়েছে।
তার এই অভিশপ্ত বই এর রহস্য জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে আজ থেকে ১০ বছর আগের মায়া এর জীবনে।

আজ থেকে ১০ বছর আগের কথা. . . . . . . .


Continue.....
 ★◆◆◆[দ্বিতীয় পর্ব coming soon.......]

No comments

এক চিলতে রোদ্দুর।

খুব সাবধানে পায়ের আওয়াজ বাঁচিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো সুচেতনা। পবিত্র ওপাশ ফিরে এখনও ঘুমাচ্ছে। বাথরুমের লাইট জ্বেলেই দুফোঁটা ইউরিন ফেললো প্...

Powered by Blogger.