The খাদেম আলী।


তখন রাত্রি 3:20.হঠাৎ গুলির আওয়াজ।খাদেম খুন হয়েছে।আজ 27 তম রোজা।রোজা রাখবার জন্যে রোজকের মতো আজও ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বিছানাতেই তলস্তয় সমগ্র পড়ছিলেন।পাশে জানালা টা খোলা ছিল।গুলি টা সেখান থেকেই করা হয়েছে।গুলির আওয়াজ শুনে রান্না ছেড়ে তার মা এসে দেখে খাদেম এর পেট থেকে রক্ত বিছানায় ভেসে গেছে।ততক্ষনে খাদেম আর বেঁচে নেই।গুলির আওয়াজ এ সমস্ত গ্রামের লোক এসে হাজির।সারা গ্রামে হৈচৈ পরে গেছে ,খাদেম খুন হয়েছে খাদে।
..........
ভারত স্বাধীন হওয়ার 18 বছর পরেও এক পরাধীন এলাকা।বাংলাদেশ প্রান্ত ঘেসে মুর্শিদাবাদ সংলগ্ন, কয়েকটি গ্রাম (ডিহিপাড়া, কানাপাড়া)সেখানেই বেড়ে ওঠা, সংগ্রাম খাদেম আলীর।আজও এই অঞ্চল থেকে বাইরে পড়তে আসা ছেলে-মেয়েদের , অনুপ্রেরণার নাম খাদেম আলী।
.......
ভারত স্বাধীন হওয়ার ঠিক একদশক পরের কথা।সাধারণ মানুষ নিজেকে গুছিয়ে নিতে ব্যাস্ত।গ্রামের খেটে খাওয়া লোক গুলো কাজের সন্ধানে যেত বহরমপুর,বর্ধমান কেও বা কলকাতা।কিন্তু হঠাৎই গ্রামে এক নতুন উপদ্রব শুরু হয়।কালা মজিদ।এটা একটা শুধু নাম ই নয় ।একটা আতঙ্ক।তিনি শুধু মামুলি চোর বা ডাকাতই ছিলেন না।নিজের নামের ব্র্যান্ড খুলে বসেছিলেন।দিনে রাতে দল বল নিয়ে বাড়ি ডাকাতি করা ।শুধু জমানো টাকায় নয় থালা বাসন ও বাদ দিতেন না।কেও বাধা দিতে এলে খুন করতে দুবার ভাবতেন না।এর পরেও গ্রামের মেয়েদের উপর অত্যাচার।কারো কিছু বলার সাহস থাকে না।শেষ মেস গ্রামের মানুষ তাকে ইনকাম এর কিছু টা অংশ দিতে শুরু করলেন এই অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে।
......
পুলিশ, নেতা সবাই কে জানিয়েও কিছু লাভ হয়নি।

.......
খাদেম আলী গ্রাম থেকে 4 কিমি দূরে একটা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে ,বহরমপুরে কৃষনাথ কলেজে একাদশ এ ভর্তি হয়েছেন।অতি কষ্টের সঙ্গেই তাকে জীবন চালাতে হয়।কিন্তু যারা বিপ্লবী হয় তারা সমস্ত প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে যুদ্ধ করে যায়।নিজে যেটুকু পড়াশোনা করতেন তার বাইরে শুরু করলেন গ্রামের কিছু ছেলে কে নিয়ে দল গঠন।সেখানে তার কিছু সমবয়সী কে নিয়ে একটা ক্লাব ঘর করলেন।সেখানে গ্রামের ছোট ছেলে মেয়ে দের পোড়ানোর জন্যে।এই ভাবেই চলতে থাকে।হঠাৎ কালা মাজেদ সেখানে একদিন উপস্থিত।খাদেম এর উদ্যোগ দেখে কালা মাজেদ সমস্ত কিছু ভাঙচুর করে দেয়।আর খাদেম সহ কিছু বন্ধু কে যাচ্ছে তাই ভাবে মারধর করাহয়।
বেশ কয়েক মাস সব কিছুই বন্ধ থাকে।প্রতিবাদ আরো বেড়ে যায় ।পড়াশোনা বাদ।এর পর আবার ও খাদেম তার কিছু পরিচিত বন্ধু নিয়ে একটা ক্লাব গঠন করে,প্রগতি সংঘ।তাদের কাজ চুপি চুপি লোকের বাড়ি গিয়ে আলোচনা করা ,লোকের মনে শক্তি দেয়া।কি ভাবে এই অত্যাচার থেকে শান্তি পাওয়া যায়।
........
যখন কিছুতেই কিছু হলোনা,সংঘের নতুন প্লান হলো কালা মাজেদ কে খুন করতে হবে।
........
তখন রাত্রি 7 টা।কালা মজিদ, সাথে 3 জন সঙ্গী নিয়ে পার্টি অফিসে থেকে হেটে বাড়ি ফিরছে।পার্টি অফিসে থেকে বেরিয়ে ফাঁকা একটা মাঠ ,তার বাড়ি হেটে 35 মিনিট এর রাস্তা।10 মিনিট হাটার পর একটা কলা বাগান ,কলা বাগান পেরোতেই তার তিন জন সঙ্গী সহ আরো বেশ কয়েক জন মাথায় কালো কাপড় দিয়ে মুখ অবধি ঢাকা।মজিদ এর তিন সঙ্গী তার হাত পা চেপে ধরে,কোমরের থেকে রিভলভার টা বের করে নিলো।তারপর মুখোশ খুলে খাদেম এগিয়ে এলো।কালা মাজেদ শুধু তার সঙ্গীদের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো।কিন্তু কি আর করার ক্রীতদাস হয়ে মানুষের ভালো করার জন্যে তারা এতদিন তার সাথে ছিল।হয়তো তাদের মধ্যে কারোর বাবা ,মা ,ভাই কে খুন করেছে মাজেদ।এর পর সোজা তাকে নিয়ে গ্রামের লোকের মধ্যে দিয়ে দেয়া হয়।
......
আজ প্রগতি সংঘের উৎসবের দিন।সারা গ্রাম মেতেছে সেই খুশিতে।
......
 প্রগতি সংঘে গ্রামের বাচ্চা দের নিয়ে শুরু হলো প্রাইমারি স্কুল।খাদেমের যখন 21 বছর।তখন গ্রামের লোকের আবদারে গ্রাম-পঞ্চায়েত ভোটে এ প্রার্থী নির্বাচিত হলো,এবং বিজয়ী হলো।...
...
পরবর্তী সময় গুলো খাদেম এর ভালো কাটে নি।রাজনীতিতে জড়িয়ে যাওয়ার পর গ্রামের অনেক উন্নতি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তার উচ্চ পদস্থ নেতা দের সাথে তার মতের মিল হতো না।
পরে গ্রামের লোকের সহায়তায় ঠিক করল সেও উচুপদে  প্রার্থী হবে।শুরু হয় নতুন কার্য কলাপ।
........
ভোটের কিছু দিন আগে,
1980 সালে রোজার মাস ,রাত্রী 3:20 ,বিছানায় শুয়ে তলস্তয় পড়ছিলেন,পাশের জানালা থেকে তাকে গুলি করা হয়।
.....
মানুষের চিৎকার দেখে খুনি আর বেরোতে পারেনি।সেও সেই ভিড়ের মধ্যে থেকে গিয়েছিল।পরের দিন সকাল বেলায় খাদেম এর মৃতদেহ ফুল দিয়ে সাজিয়ে গাড়িতে তোলা হয়।খুনি নিজেকে ঢেকে রাখার জন্যে সেও গাড়িতে উঠেপড়ে।সারাদিন গাড়ি নিয়ে পুরো এলাকা ঘোরানো হয়।কিন্তু শেষ মুহূর্তে খুনি ধরা পড়ে।খাদেম এর এক বিশেষ ঘনিষ্ঠ বন্ধু লক্ষ করে গাড়িতে যারা ছিল সব্বাই পরিচিত,শুধু একজন বাদে।প্রথমত কেও লক্ষ্য করেনি ,এত মানুষ এর হাহাকারে,পরে তাকে ধরে জেরা করা হয় ,তখন খুনি শিকার করে সেই খুন করেছে ,কিন্তু তাকে খুন করতে বলা হয়েছে।তার বাড়ি এখানে নয়।বিরোধী দল নেতারা ,খাদেম কে খুন করার জন্যে তাকে ভাড়া করেছিল।
.....
1986 সালে তার নামে স্কুল খোলা হয় ডিহিপাড়া খাদেম আলী মেমোরিয়াল হাই স্কুল। 27 বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
       .............................................................
               (তথ্য সংগ্রহ-সম্পাদক পত্রিকা,history of dihipara, প্রদর্ষিকা পত্রিকা)
                              ★  Article by-অনীক ইসলাম।
      

No comments

এক চিলতে রোদ্দুর।

খুব সাবধানে পায়ের আওয়াজ বাঁচিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো সুচেতনা। পবিত্র ওপাশ ফিরে এখনও ঘুমাচ্ছে। বাথরুমের লাইট জ্বেলেই দুফোঁটা ইউরিন ফেললো প্...

Powered by Blogger.