পিশাচ_সংসার।(3)

পিশাচ_সংসার।
★লেখক-মাসুদ রানা।

                 (৩য় পর্ব)
           ---------------------




           

শামীম এবং জাহানারা আবার মুখে কাপড় বেধে হাতে ছুরি নিয়ে আরেকটা দেহের খোঁজে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

তাদের চোখেমুখে শুধু রক্ত তৃষ্ণা। এমনভাবে তারা হেটে যাচ্ছিলো যে সামনে যদি তখন কোন মানুষকে পেতো তাহলে সাথে সাথে ছিরে খেতো তাদের শরীর। তারা আজ বিলাস বাংলো থেকে বেশ অনেকটা দুরেই একটা গ্রামে পৌছেছে। গ্রামে প্রবেশ করেই জানতে পারে যে গ্রামে নাকি আজ বিশাল এক মেলা। এই কথা শুনে শামীম আর জাহানারা আরো বেশি খুশি হয়। আজ তো সোনায় সোহাগা ।তারা ভাবে আজ মেলায় মানুষের অভাব হবে না। একজনকে বোকা বানিয়ে নিতে পারলেই হলো। একজনকে দিয়েই মেটানো যাবে জাহানারা এর রক্ত তৃষ্ণা আর শামীমের ক্ষুধা।

তারা দুজনেই মেলায় প্রবেশ করে। একা কোথাও কোন মানুষ ঘুরাঘুরি করছে নাকি তাই খুজতে থাকে তারা। তবে আজ তাদের আরো বেশি সতর্কতা নিয়ে মানুষ শিকার করতে হবে। কারন একদিকে এতোগুলো মানুষ এক সাথে থাকায় যেভাবে সহজে শিকার খুজে পাওয়া যাবে আবার এতোগুলো মানুষের ভেতর ধরা পরে জাওয়া সম্ভাবনাও বেশি। তারা বিভিন্ন মানুষের দিকে ললাট ক্ষুধার্থ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলো। তবে এই মেলা থেকে দুরে সরিয়ে তাদের খুন করা প্রায় অসম্ভব।

এরপর জাহানারা এর তৃষ্ণার্থ দৃষ্টি যায় একটা বাচ্চা
ছেলের উপর। ছেলেটার বয়স আর কত হবে ৬-৭ বছর। ছেলেটা মেলার একপাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কান্না করছিলো। জাহানারা দেখেই বুঝতে পারে হয়তো ছেলেটা একা মেলায় এসেছে নতুবা মেলায় এসে হারিয়ে গেছে। তাহলে এটাই হবে আজ জাহানারা আর শামীমের খাবার। তারা দুজনেই ললাট দৃষ্টিতে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে ছিলো। এরপর জাহানারা শামীমকে বললো:
-অনেকদিন ধরে কচি মানুষের রক্ত খাওয়া হয়না। তাই না? এদের রক্তের স্বাদ আরো মধুর হবে।
-এদের মাংস খেয়েও তৃপ্তি পাওয়া যাবে। হাহাহা।

এরপর শামীম আর জাহানারা দুজনেই বাচ্চাটার কাছে যায়। হঠাৎ বাচ্চাটা তাদের দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে অবাক হয়ে কান্না থামিয়ে দেয়। জাহানারা নরম কন্ঠে বাচ্চাটাকে বলে:
-কি হয়েছে বাবা? কাউকে খুজে পাচ্ছো না? তোমার বাবা-মা কোথায়?

বাচ্চা ছেলেটা তার কথা শুনে । কিন্তু এর কোন উত্তর দিতে পারে না। জাহানারা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বলে:
-চলো ভবিষ্যতে তোমার বাবা-মা যেখানে থাকবে তোমাকে সেখানে পাঠিয়ে দেই।

এই বলেই মেলা থেকে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে শামীম আর জাহানারা হাটতে থাকে। কিন্তু বাচ্চাটা যেতে চায় না।
তাই কাঁদতে থাকে। জাহানারা অনেকটা জোড় করেই তাকে নিয়ে যায়। তবে আশেপাশের কোন লোকেরাই তাদের সন্দেহ করে না। কারন শামীম আর
জাহানারা দুজনেই বাচ্চাটার বাবা-মায়ের বয়সী। তাই যারা দেখেছিলো বাচ্চাটাকে কাঁদতে তারা ভাবে হয়তো এটা তাদেরই সন্তান। আর মেলায় এতো ভীরের মধ্যে তাদের দিকে লক্ষ করার মানুষো কম ছিলো।

শামীম জাহানারাকে বললো:
-বাচ্চাটাকে নিয়ে কোথায় যাবো আমরা? বিলাস বাংলোতে?
-নাহ এতোদুর নিয়ে জাওয়া যাবে না। মানুষ সন্দেহ করতে পারে। ঐ যে একটা ঝোপ দেখা যাচ্ছে চলো এখানেই কাজ শুরু করি।

মেলার পাশেই একটা ঝোপ ছিলো। এখন প্রায় বিকেল তাই মানুষের এই দিকে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

বাচ্চাটাকে নিয়ে ঝোপের ভেতর ঢুকে বাচ্চাটাকে দাঁড় করিয়ে দেয় জাহানারা। বাচ্চাটা কিছুই বুঝছিলো না যে তার সাথে কি হতে চলেছে। বাচ্চাটা ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে:
-আমি আম্মুর কাছে যাবো।

জাহানারা এর কোন উত্তর দেয়নি। ছেলেটার দিকে তৃষ্ণার্থ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। এরপর ছেলেটা কিছু বুঝতে পারার আগেই ছুরিটা বের করে সোজা চালিয়ে দেয় বাচ্চা ছেলেটার গলায়। ছেলেটার গলা থেকে মাথা আলাদা হয়ে যায়। চারিদিকে এতো রক্ত দেখে পাগলের মতো বাচ্চাটার শরীর চুসে চুসে খেতে থাকে জাহানারা। আর বলে:
-আহ! বাচ্চাদের রক্তের স্বাদ অমৃতের মতো।
আজ জীবনটা স্বার্থক।

এরপর আস্তে আস্তে বাচ্চাটার পুরো শরীরের রক্ত চুসে শেষ করে দেয় জাহানারা। এইদিকে শামীমও উতলা
হয়ে লাশটার দিকে তাকিয়ে ছিলো। জাহানারা এর রক্ত তৃষ্ণা মেটার সাথে সাথে বাচ্চাটার উপর ঝাপিয়ে পরে সে। এরপর ছিরে ছিরে খেতে থাকে বাচ্চাটার হাত আর পায়ের অংশ। এরপর বাচ্চা মানুষের শরীরের সবচেয়ে মজার অংশ তাদের কাছে অর্থাৎ হৃদপিন্ড খাওয়ার প্রস্ত্তুতি নেয় শামীম। ছুরি দিয়ে বাচ্চাটার বুক ছিদ্র করে হাতটা ঢুকিয়ে দেয় ভেতরে হৃদপিন্ড বের করার জন্য।

তবে হঠাতই আচমকা ভাবে একটা ১০-১২ বছরের মেয়ে ঝোপের দুর থেকে তাদের এই পৈশাচিক কর্মকান্ড দেখে ফেলে। দেখেতো অনেক ভয়ে মেয়েটা চিৎকার দিয়ে উঠে:
-ওহ মা! বাচাও। রাক্ষস এসেছে। মানুষকে ছিরে ছিরে খাচ্ছে!! বাচাও গো কে কোথায় আছো?!!

এই বলেই শামীম আর জাহানার কিছু বুঝতে পারার আগেই বাচ্চা মেয়েটা চিৎকার করতে করতে মেলার দিকে ছুটে যায়। শামীম আর জাহানারা তাদের রক্ত আর মাংসের নেশায় এটাই দেখতে ভুলে যায় যে কেউ তাদের দেখতে পারছে কিনা এটা দেখতে। তারা দুজনেই ভয় পেয়ে যায়। তারা জানা যে মেয়েটা যদি মেলায় গিয়ে সবাইকে বলে দেয় এই কথা তাহলে সবাই তাদের ধরে নিয়ে যাবে । তাই ভয়ে বাচ্চা ছেলেটার লাশ ঝোপে ফেলেই ঝোপের দিকের একটা জঙ্গলের ভেতর আপন শক্তিতে দৌড়ে পালাতে থাকে তারা। এই প্রথম তারা কোন খুন করতে নিয়ে ধরা পরলো। তবে লোকে দেখার আগেই তাদের পালাতে হবে। হয়তো আর কিছুক্ষন আগে টের পেলে এই বাচ্চামেয়েটাকেও খেতে পারতো জাহানারা আর শামীম। তবে একটা বাচ্চাকেই ভালোমতো খেতে পারলোনা তারা।


এরপর সেই ১০-১২ বছরের মেয়েটাই চিৎকার করতে করতে মেলায় গিয়ে সবাইকে বলে:
-ঐ ঝোপের ভেতর একটা ডাইনী আর রাক্ষস একটা বাচ্চা ছেলেকে ছিরে ছিরে খাচ্ছে।

মেয়েটার কথা শুনে প্রথমে কেউ বিশ্বাস করেনি। পরে মেয়েটা ভয়ে অজ্ঞান হয়ে পরলে বেশ কিছুলোক হাতে লাঠি আর লাইট নিয়ে ঝোপটার দিকে যায়। এতক্ষনে শামীম আর জাহানারা সেখান থেকে পালিয়ে জঙ্গলের অনেক ভেতরে চলে এসেছে। তবে ঐ ঝোপটাতে যাহ দেখলো গ্রামের লোকেরা তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না তারা।

বাচ্চা ছেলেটার গলা থেকে মাথা আলাদা হয়ে পরেছিলো। ছেলেটার বুক ছিদ্র করে হৃদপিন্ড বের করা ছিলো। তার হাত আর পা ছিলোনা। মনে হচ্ছিলো কোন পশু ছিরে খেয়েছে। পেট ছিরে নাড়ি-ভুরি বাহিরে বেরিয়ে ছিলো।তারা এইটা দেখে একসাথে সবাই ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে। মুহূর্তের মধ্যে মেলার এবং গ্রামের সব লোকেরা খবর পেয়ে লাশটার পাশে জড় হয়ে ঝোপটা ঘীরে দাড়িয়ে ছিলো।

কেউই বুঝতে পারছিলোনা লাশটা কার। আর কোন পশু এই কাজ করেছে বা কিভাবে মারা গেছে।

এরপরেই সাথেসাথে সেখানে পুলিশ চলে আসে। সেই এলাকার পুলিশের এস.আই ছিলো জীবন আহমেদ। তাকেই তাই তদন্তের দায়িত্বটা দেওয়া হয়।

পুলিশেরা এসে বাচ্চা ছেলের লাশের এই ভয়ংকর চেহারা দেখে তারাও ভয়ে আতকে উঠে। এস আই জীবন তার পুরো জীবনে এইরকম হত্যা দেখেনি। এতোটা ভয়ংকর ভাবেও কেউ কাউকে হত্যা করতে পারে এটা তার জানা ছিলো না। তদন্তের জন্য তারা লাশটাকে পোস্ট মডামের জন্য পাঠিয়ে দেয়। তদন্তের জন্য সেই বাচ্চামেয়েটা প্রশ্ন করে:
-তুমি কিভাবে দেখলে এই লাশটাকে? আর কারা কিভাবে মেরেছে? কোন পশু তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো?
কোনো ভয়ংকর প্রানী দেখেছো!!!

তবে মেয়েটার ভয়ে মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছিলো না। মেয়েটা বোবার মতো বসে ছিলো। কিছু মহিলা পুলিশ অনেক ভালোবেসে আদর করে মেয়েটাকে প্রশ্নগুলো করে। এরপর মেয়েটা বলে:
-আমি একটা পুরুষ আর একটা মহিলাকে দেখেছি লাশটা খেতে। মহিলাটা পাগলের মতো রক্ত খাচ্ছিলো আর পুরুষটা মাংস। ওরা রাক্ষস আর ডাইনী ছিলো মনে হয়।

কথাটা শুনে সবাইতো বেশ ভয় পেয়ে যায়। তবে কেউ তার কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারেনি। একজন মানুষ কি করে আবার আরেকজনকে খেতে পারে!!! পুলিশরা ভাবলো হঠাৎ কোন প্রানী দেখে হয়তো ভয় পেয়ে এইসব কথা বলছে মেয়েটা। তবে এই গ্রামের আশেপাশে কোন ভয়ংকর প্রানিও থাকার কথা না। শেষমেস বাচ্চা ছেলেটার লাশ নিয়ে তারা ফরেনসিক ল্যাবে যায় তদন্ত করতে।

তারা লাশটাকে নিয়ে যায় বিখ্যাত ডাক্তার আলী আমজাদের কাছে। তবে আলী আমজাদ পাগল ডাক্তার নামেই বেশি খ্যাতো। তাকে অনেকেই পাগল বলে। পুলিশ জীবন আহমেদের জীবনের সবচেয়ে অপছন্দের মানুষদের মধ্যে আলী আমজাদ একজন। আলী আমজাদ একজন ডাক্তার হয়েও অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস করেন। এবং তিনি পিশাচ নিয়ে ৩ টা বইও লিখেছেন। অপছন্দের হলেও পুলিশ জীবন এর আর কোন উপায় নেই । আলী আমজাদের ল্যাবেই তাকে যেতে হবে। কারন আলী আমজাদ এর চেয়ে ভালো ডাক্তার আর ল্যাব এই এলাকায় পাওয়া যাবে না। ঐ শহরে যেতে হবে।

অবশেষে মুখ কালো করেই আলী আমজাদের ল্যাবে হাজির পুলিশ জীবন আহমেদ।

আলী আমজাদ লাশটাকে দেখে ভয়ে আতকে উঠেন। আর বলেন এইটাতে কোন পিশাচের পৈশাচিক কাজ।


. . . . . . Continue. . . . .

No comments

এক চিলতে রোদ্দুর।

খুব সাবধানে পায়ের আওয়াজ বাঁচিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো সুচেতনা। পবিত্র ওপাশ ফিরে এখনও ঘুমাচ্ছে। বাথরুমের লাইট জ্বেলেই দুফোঁটা ইউরিন ফেললো প্...

Powered by Blogger.